সিলেট ২০শে মে, ২০২২ ইং | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০
মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ:
মনের খুশিতে পান চিবায় আর ভাবে অতীতে পার করা কষ্টের দিনগুলোর কথা। কি থেকে কি হলো, সারাজীবন ঠিকানাবিহীন স্বামী পরিত্যাক্তা জায়েদা খাতুন (৫৫)। আজ নতুন স্বপ্ন দেখছেন তিনি। গুচ্ছগ্রাম তাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তাঁর মতো ৬০টি পরিবার গুচ্ছগ্রামের কারণে সহায়-সম্বলহীন অবস্থা থেকে আজ রঙিন আলোতে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। সব হারানো এই মানুষগুলোর স্বপ্ন দেখালো প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। পরিবেশ ও অসহায় দুর্গতি ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের একটি সফল প্রকল্প হতে যাচ্ছে উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের আটগাঁও লালবাজার সংলগ্ন খাস ভূমিতে। আদর্শ গ্রামের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির আওতায় জেডিসিএফ এর অর্থায়নে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পের পুরো নাম ফ্লাইমেট ভিক্টিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট। সরকারি খাস জমিতে ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন নদী ভাঙনের শিকার পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষমাত্রা নিয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এই প্রকল্পটি সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ হলো অসহায়-দুর্গত, ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে গৃহ ও তৎসংলগ্ন পরিবেশ প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণসহ আয়বর্ধক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। যা দেশের দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে প্রধান পেশার মানুষ হচ্ছে কৃষি শ্রমিক ও দিনমুজুর। উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় এবং বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা না থাকার কারণে অতীতে অনেকেই শহরে বিভিন্ন পেশায় দিন কাটাচ্ছিল। সমাজের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিবারগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন করাই বিদ্যালয়গামী শিশুর সংখ্যা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবেশ জ্ঞান এবং পরিবার-পরিকল্পনা গ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তারা এখন সমাজের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত হবে। পূর্বে এসব হতদরিদ্র্য পরিবারগুলোর নারীরা ছিল অধিকার বঞ্চিত, অবহেলিত ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক জনগোষ্ঠী। গুচ্ছগ্রামের বসতভিটা ও ঘরের মালিকানা স্বত্ব স্বামী-স্ত্রী দু’জনের সমান হওয়ায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সচেতনতা, দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে নারীদেরকে সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রামের প্রতিটি ঘরের আঙিনায় শাকসব্জি, ফলজ, ওষধী বিভিন্ন গাছপালা রোপণের সুযোগ পাবে। এতে করে একদিকে তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে অন্যদিকে অতিরিক্ত কিছু ফলমূল, শাকসব্জি বাজারে বিক্রি তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করতে পারবে। গুচ্ছগ্রামের পুকুর থেকে মৎস্য চাষের মাধ্যমে তাদের মাছের চাহিদা পূরণ করে আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও উন্নতমানের বন্ধু ছুলা প্রতি পরিবারে দেওয়া হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব নিজ কার্যালয়, ভীমখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, একই ইউনিয়নের নোয়াগাঁও বাজার, লালবাজার, গাঘটিয়া গ্রামে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৬০টি পরিবারকে গণশুনানীর মাধ্যমে বাছাই করেন। কিছুদিনের মধ্যেই পরিবারগুলো তাদের নতুন স্বপ্নের ঠিকানা গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই পাবে।
ভীমখালী ইউনিয়নের ছেলাইয়া গ্রামের জয়নুল হক মেম্বারের বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা মোছা. আছিয়া খাতুন বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মানুষের বাড়ি বাড়িতেই দিন কাটাইয়া আইছি। ভাবছিলাম গরীবের কেউ নাই। এখন দেখি গরীবের লাগি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। উনি আমাদের এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের থাকার একটা জায়গা করে দিয়েছেন। দোয়া করি আল্লাহ তাঁরে যেন সারাজীবন প্রধানমন্ত্রী রাখে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিন্নমূল, ভূমিহীন, ঠিকানাবিহীন মানুষকে গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে ঠিকানা পাবেন আশ্রয়হীন মানুষেরা। পূর্বের আবেদনকৃত ‘ক’ তালিকা থেকে প্রতিটি এলাকায় গণশুনানীর মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীনদের বাছাই করা হয়েছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com