
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত সাতদিনে করোনায় মারা গেছে ২৩০ জন। এরমধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা মঙ্গলবার ৪৩ জন।একদিকে নতুন সময়ের বাস্তবতাকে গ্রহণ করে জীবন এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ, আরেকদিকে করোনাকে প্রায় অস্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা স্যাটায়ার পোস্ট। পোস্টগুলোর বক্তব্য—করোনা মিডিয়ায় আর অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আছে, বাস্তবে নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের স্বাভাবিক জীবনে সতর্কতার সঙ্গে ফিরতে হবে, কিন্তু এ ধরনের স্যাটায়ারের ফলে সেকেন্ড ওয়েভে আমরা বিপদে পড়তে পারি।
বুধবার রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগান, শুক্রাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষই বাড়তি কোনও সতর্কতা মানছেন না। বাইরে বের হলে মাস্ক একটা সঙ্গে থাকলেও সেটি একেবারেই গুরুত্ব দিয়ে পরছেন না। কেউ কেউ মাস্ক সঙ্গেও নিয়ে বের হননি। মোহম্মদপুর টাউন হলের সামনে গাড়ি থেকে নামেন সেলিনা খানম। কেন মাস্ক পরেননি প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়িতে এসেছিতো, ভুলে গেছি। আর এখন তো সব ‘নরমাল’
ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে খাবারকলাবাগানে রাস্তায় খাবারের দোকানগুলো খুলেছে গত মাসে। খিচুড়ি ডিম বেড়ে দিচ্ছেন যিনি তার মাস্ক গ্লাভস নেই, যাদের দিচ্ছেন তারা মাস্কটা গলায় ঝুলিয়ে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনার ডর লাগে কিনা হালিম মিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কোথায় করোনা? বড়লোকদের হয়েছিল। তাদের ডর ছিল যতদিন আমাদের বাসায় ঢুকতে দেয়নি, কামে নেয়নি। এখন নাই মনে হয়। সব তো স্বাভাবিক।
“>প্রায় সবাই চলছেন মাস্ক ছাড়াআর বন্ধুদের বাড়ি যাতায়াত, একসাথে কোথায় খেতে যাওয়া এসব তো অনেক দিন পর করছি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তাবাসসুম বলেন, আমরা অনেক দিনই মেনে চললাম। এখন মহামারি কতদিন থাকবে তা তো জানি না। ফলে বাসা থেকে কিছু নিষেধ থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে একটু একটু বের হচ্ছি। বন্ধুরা কমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, সেখানে কেউ আক্রান্ত কীনা জানা নেই। এটা বেশি ভীতির কারণ হতে পারে মনে করেন কিনা প্রশ্নে তাবাসসুম বলেন, এত ভেবে দেখিনি। কিন্তু করোনা যেভাবে এসেছে সেভাবেই একসময় চলে যাবে।
নান কাজে হচ্ছে জমায়েতকরোনাভাইরাস আপনা-আপনি চলে যাবে এই ভাবনাটা বিপদ ডেকে আনতে পারে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে যতদিন থাকবে ততদিন সবার ঝুঁকি থাকবে। বারবার বলা হলো নিজ বাসায় থাকার কথা, কিন্তু সেটা ঈদের পরে আর সম্ভব হলো না। অফিস মার্কেট খুলে গেলো। করোনার ক্ষেত্রে আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিনের বিকল্প এখনও কিছু তৈরি হয়নি।
করোনাকে কেবল তরুণরা না, কেউই এখন আর আমলে নিচ্ছেন না মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন চিকিৎসক লেনিন চৌধুরী বলেন, যে সময়টা সতর্ক থাকা দরকার সে সময়টায় ভুলেই গেলাম আমরা কোভিড সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অফিস আদালত খুলে দিয়ে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলো ঠিকই, কিন্তু নিয়ম না মেনে সেই জীবনযাপন করা যাবে না সেটা শিখিয়ে দেওয়া হলোনা। ফলে এখন আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, কেউ দূরত্ব মেনে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। দোকানে দোকানে সামাজিক দূরত্বের যে দাগ কেটে দেওয়া হয়েছিল সেগুলো মিলিয়ে যাওয়ার পরে আর নতুন করে দেওয়া হয়নি। ভুলে গেলে চলবে না, করোনা এভাবেই চলে যাবে না। সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হবে।
হোটেল রেস্তোরাঁতে চলছে নিয়ম না মেনে খাবার বিক্রিছবি: সাজ্জাদ হোসেন, সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন।