সিলেট ২১শে জুন, ২০২২ ইং | ৭ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২০
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মধুরাপুর গ্রামের মাছ বিক্রেতা নূরমোহাম্মদের খুনীদের গ্রেফতারের দাবীতে এবং নিহতের পরিবার ও স্বজনদের উপর হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে নিহত নুরমোহাম্মদের স্বজন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার বিকালে মধুরাপুর চারগ্রাম শাহজালাল বাজারে প্রবীণ মুরব্বী বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ও প্রতিবাদ সভাও মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিহত নূর মোহাম্মদের দুইপুত্র তুরন মিয়া ও ইরন মিয়া, নিহত নূর মোহাম্মদের ভাই নুরুল হুদা ও নুরজালাল, মধুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি আব্দুল হারিছ, বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান শিপু চৌধুরী ও আদিল আহমেদ, তোফায়েল খান, সুজন মিয়া, আব্দুল খালিক তালুকদার, আব্দুস সহিদ চৌধুরী, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, সুমন আহমদ তোরন, শরীফ চৌধুরী, আবু হানিফ প্রমুখ।
মানববন্ধনোত্তর প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বিগত ১৩ অক্টোবর সকাল ৮ ঘটিকায় শাহজালাল বাজারের মাছ বাজারে চিহ্নিত সন্ত্রাসী দিলহক বাহিনীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত মাছ বিক্রেতা নূর মোহাম্মদের খুনীদের গ্রেফতার এবং নিহতের পরিবার ও স্বজনদের উপর হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান। দীর্ঘ একমাসে ও নুর মোহাম্মদের হত্যাকারী দিলহক, সুয়েব সহ প্রধান প্রধান আসামিদের গ্রেফতার না করায় নিহতের স্বজনরা আতংকিত। যেকোন সময় খুনের মামলার আসামীদের দ্বারা প্রাননাশক হামলার আশংকা প্রকাশ করে নিহত নুরমোহাম্মদের পুত্র তোরন মিয়া বলেন “ আমার বাবাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিঠিয়ে হত্যার একমাস পর ও খুনী দিলহক ও তার সহযোগীদের এখন পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি, বরং আমাদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে চলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন আমার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হউক নইলে আমাদেরকে ও মেরে ফেলা হউক, প্রতি মুহুর্তে আতংকে আছি আমরা, বাবাকে হারিয়েছি এবার নিজেদের প্রান হারানোর আতংকে আছি। যেকোন সময় আমাদেরকে খুন করে লাশ গুম করে দিতে পারে। আমি ও আমার ভাইয়ের উপর এবং আমাদের মানীত স্বাক্ষীদের উপর মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। একদিকে খুনীদের আতংক অপরদিকে পুলিশী হয়রানীর আশংকা, এখন আমরা কার কাছে বিচার চাইবো? বাবা হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে খুনী দিলহকের স্ত্রী রেজিয়ার দায়েরী মিথ্যা বানোয়াট মামলার আসামী হয়েছি, আমার পিতার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমি ও আমাদের পরিবার আকুল আবেদন জানাই”।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মধুরাপুর গ্রামে বিগত ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৮ ঘটিকায় স্থানীয় শাহজালাল বাজারের মাছ বাজারে মাছ বিক্রির টাকা চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসী দিলহক বাহিনীর হামলায় মাছ বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ (৫০) নিহত এবং নিহতের পুত্র হীরন মিয়া গুরতর আহত হন। এ ঘটনায় নিহত নূর মোহাম্মদের পুত্র হীরন মিয়া বাদী হয়ে দিরাই থানায় সন্ত্রাসী দিলহক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নং জিআর-১০১/২০২০ইং দায়ের করেন।
মামলার বিবরনে প্রকাশ, ঘটনার দিন ও সময়ে সন্ত্রাসী দিলহক নিহত নুর মোহাম্মদের নিকট হতে মাছ কিনে টাকা না দিয়ে চলে যেতে চাইলে নুর মোহাম্মদ মাছ বিক্রির টাকা চাওয়া মাত্রই সন্ত্রাসী দিলহক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অশ্রসস্ত্র নিয়ে মাছ বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ (৫০)ও তার পুত্র হীরন মিয়ার উপর হামলা চালিয়ে নূর মোহাম্মদকে প্রানে মেরে ফেলে। সংবাদ পেয়ে নিহতের ভাই নূর জালাল ঘটনাস্থলে আসামাত্র সন্ত্রাসী দিল হক ও তার পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পর দিরাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আহতদের উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। নিহত নুর মোহাম্মদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল পাঠানো হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ একমাস পেরিয়ে গেলে ও খুনের মামলার মুল হোতা দিলহক, সুয়েব সহ প্রধান প্রধান আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি দিরাই থানা পুলিশ। খুনীদের ক্রমাগত হুমকি ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নিহত নুর মোহাম্মদের স্বজনরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই দিরাই থানাধীন ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মধুরাপুর গ্রামে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একই পরিবারের দুই পক্ষের মধ্যে সম্পত্তি আর আধিপত্য নিয়ে বিরোধ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পক্ষে প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম লিটন চৌধুরীর স্ত্রী দয়া চৌধুরী এবং ওপর পক্ষে লিটন চৌধুরীর ছোট ভাই সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী। এদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মধুরাপুর গ্রামটি মূলত দুইভাগে বিভক্ত। প্রবাস থেকে দেবর-ভাবীর নির্দেশ মতো চলতে গিয়ে তাদের অনুসারী দু’পক্ষ দুই মেরুতে চলতে থাকে। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে প্রায়শই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ব্যাপারটা দিরাই থানা,উপজেলা চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের প্রায় সবাই কমবেশি অবগত।
মধুরাপুর বাজারে অস্থায়ী পুলিশ কেম্পে দায়িত্বরত এসআই ফজলুল হক জানান, এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে কোন ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা যেনো না হয় সে দিকে আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে।
ঘটনার পরপর এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো জানিয়ে পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আশরাফুল ইসলাম।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com