সিলেট ২৮শে মে, ২০২২ ইং | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২০
আমিনুল হক :
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ৩০ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দীর্ঘ ৯মাস পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল আমাদের বীর সেনানীদের। জীবন বাজি রেখে তাঁরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কত মা তাদের সন্তানদের খোঁজ পায়নি। কত মা-বোন তাদের স্বজনদের চোখের সামনে সম্ভ্রম হারিয়েছে। তারই স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী ডলুরা।
মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টরের বালাট সাবসেক্টরের অধীনে সুনামগঞ্জের ডলুরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ১৯৭১ সনে এই সাব-সেক্টরে প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন বাংলার দামাল সন্তানরা। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে এসে সমবেত হয়েছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করার দৃঢ় শপথ নিয়ে অনেকেই পরিবারকে না জানিয়ে যুদ্ধে এসেছিলেন। তাই তাঁদের যুদ্ধের খবর জানত না পরিবারের লোকজন।
দেশ স্বাধীন করে অনেকে বীরের বেশে পরিবারের কাছে ফিরলেও সম্মুখযুদ্ধে শহিদ ৪৮ জন যোদ্ধাকে ডলুরা সীমান্তে গণকবর দেন ঐ সময়কার মুক্তিযোদ্ধারা। অনেক স্বজনরাও জানতেন না শহীদ স্বজনের খবর। মুক্তিযুদ্ধে সেই শহীদদের গণসমাধি স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর দৃষ্টিনন্দন উন্নয়নের মাধ্যমে সংস্কার করে তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়ফলক লাগানো হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর শহীদের স্বজনরা স্বজনের কবরে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। শুকিয়ে যাওয়া চোখে জলের ধারা বইয়ে দিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সনে বালাট সাবসেক্টরের যোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তাদের মধ্যে ৪৮ জন শহীদের লাশ সংগ্রহ করে ডলুরা সীমান্তে সমাহিত করেন সহযোদ্ধারা। ওই গণকবরে শুধু নম্বর ও নাম দিয়ে কবরগুলো কোনোরকম চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে সেখানেই পিলারের ওপর নম্বর ও কেবল নাম বসিয়ে মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট কিছু কাজ করে।
ডলুরা শহীদ মিনার এলাকায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে কিছু সংস্কার কাজ করেন বাঁশতলা সাবসেক্টরের অধিনায়ক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন এ এস এ হেলাল উদ্দিন। পরে বিভিন্ন সময়েও কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। কিন্তু এতদিন শহীদদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় উদ্ধার করে কবরে স্মৃতিফলক লাগানোর কোনো উদ্যোগ ছিল না।
গত বছর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট ডলুরা গণকবরে সমাহিত সকল শহিদের পরিচয় উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টিনন্দন সংস্কারে হাত দেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ও মালেক হোসেন পীর বিভিন্ন স্থান থেকে শহীদদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংগ্রহ করে দেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগৃহীত নাম-ঠিকানা ফলক বসিয়ে মার্বেল পাথরে খোদাই করে দেওয়া হয়েছে। সমাধিগুলোকে স্তরে স্তরে সুবিন্যস্ত করে আকর্ষণীয়ভাবে বসানো হয়েছে। নির্মাণকাজ উদ্বোধনকালে ডেকে আনা হয়েছিল শহীদের স্বজনদের। তাদেরকে নিয়েই নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়।
এই শহিদ সমাধী সৌধের ফলকে ৪৮ জন শহিদের মধ্যে ৪৫ জন শহিদের পূর্ণ ঠিকানা সম্বলিত ফলক বসানো হয়েছে। তিনজনের কেবল নাম রয়েছে। গণসমাধিতে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ ৪২ জন মুসলিম যোদ্ধা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ছয়জন যোদ্ধাকে একই কবরে সমাধিস্থ করেছিলেন সহযোদ্ধারা। ধর্ম-বর্ণ ভুলে একই কবরে সমাহিত আছেন বাংলার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com