সিলেট ২৩শে মে, ২০২২ ইং | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
ইংরেজি নববর্ষের পূর্ববৃত্তান্ত
শেখ একেএম জাকারিয়া
সৌরমন্ডলের বাইরে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে দৃষ্ট পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমণের সময় হলো বর্ষ বা বছর। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বছরের প্রথম দিনকে মানবজাতি মহানন্দে বরণ করে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বারো মাসকাল চক্রাকারে ভ্রমণ করে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছে নতুন বর্ষ ২০২২১। সমগ্র পৃথিবীর মানুষজন আড়ম্বরপূর্ণ তুবড়ি পটকা, বা আগুনের খেলা প্রভৃতি বাজির মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। কিন্তু কীভাবে সূত্রপাত হয়েছিল এই ইংরজি নববর্ষের, আমরা অনেকেই হয়তো সে ইতিহাস জানি না। জানার প্রয়োজনও মনে করি না। আসুন, এখনই জেনে নিই ইংরেজি নববর্ষ প্রচলনের পূর্ববৃত্তান্ত। আমরা যে ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ অনুসরণ করি তা হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, এ সম্বন্ধে নুনাধিক সবাই অবগত। এ ক্যালেন্ডার অনুসারে ইংরেজি নববর্ষ বা নতুন বছর পালন করা হয়। এই ইংরেজি বর্ষপঞ্জি নিয়েও রয়েছে নানা বাদানুবাদ। সুদূর অতীতে সার্বজনীনভাবে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন বা তারিখ অর্থাৎ পহেলা জানুয়ারি নতুন বছরের প্রবর্তন ছিল না। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বাস্তবিকপক্ষে একটি সৌর বছর। আর এই সময়ে আমরা যে ক্যালেন্ডার দেখতে পাই, তাতে পৌঁছাতে আমাদের কয়েক শত বছর সময় লেগেছে। বই-পত্রাদি ঘেঁটে জানা যায়, খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক জিশুখ্রিস্টের জন্মের ছয়শত বছর আগে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে স্থিরকরণ করা হয়েছিল নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানাতে পালিত হবে ২৬ মার্চ তারিখটি। অনন্তর সম্রাট নুমা পন্টিলাস যে সময়ে জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসকে ক্যালেন্ডারে স্থান দেন, সে সময়ে তিনি নির্ধারণ করে দেন পহেলা জানুয়ারি হবে বছরের শুরুকালীন দিন। আর ওই দিনই হবে নতুন বছরের অভ্যর্থনা। কিন্তু পরবর্তীতে সম্রাটের কথাও মানা হয়নি। রোমের অধিবাসী ভাটিক্যান পোপের অনুসারী খ্রিস্টান ধর্ম সম্প্রদায় বিশেষ পোপকে সর্বোচ্চ যাজক এবং অভ্রান্ত বলে মানে এমন খ্রিস্টান ধর্মসম্প্রদায়বিশেষ, যারা (রোমানরা) আগের মতো পহেলা মার্চে বর্ষবরণ উৎসব পালন করতে লাগল। তৎপর জুলিয়াস সিজার যে সময়ে ৩৬৫ দিনে সৌর বছরের ঘোষণা দেন, সে সময়ে তিনিও সম্রাট নুমা পন্টিলাসের মতো নির্ধারণ করেন মার্চে নয়, বছর শুরু হবে পহেলা জানুয়ারি। বর্ষবরণ পর্বও সেদিনই হবে। জুলিয়াস সিজারের ইশতাহার জারির পরপরই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান মার্চ থেকে জানুয়ারিতে চলে আসে। সে সময়ে রোমান সাম্রাজ্যে এ দেওয়ালপঞ্জি নিয়ে প্রচুর জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণেই মূলত কোন মাস থেকে নতুন বছর শুরু হবে, সেটা ঠিকই করা যাচ্ছিল না। একেক জায়গায় একেক সময়ে একেক দিনে বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। আর এভাবেই নববর্ষ পালনের রীতি হযবরল অবস্থায় চলতে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রচলিত ক্যালেন্ডারে বেশকিছু জটিলতা ছিল। এ জটিলতা দূর করতে চারশ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের উপদেশে ক্যালেন্ডারটির উৎকর্ষসাধন করেন এবং তার নামানুসারে ক্যালেন্ডারটির নাম প্রদান করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডারটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশেষ সুবিধার কারণে ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব দেশের মানুষ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করে। ইতিপূর্বে যারা নিজস্ব ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিজেদের পছন্দমতো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করত, তারাও পরবর্তীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারি নববর্ষ অনুষ্ঠান পালন শুরু করে। পরে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়। আর এই ক্যালেন্ডার ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসে এবং আজ অবধি তা চলমান রয়েছে। তবে একই দিনে নতুন বছরকে পুরো পৃথিবীর মানুষজন অভ্যর্থনা জানালেও বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশে নববর্ষ পালনের রেওয়াজ ভিন্ন। অন্য দেশের সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও নববর্ষের আনন্দানুষ্ঠানের সঙ্গে যোগ হয় দেশে প্রচলিত কৃষ্টি ও ঐতিহ্য। লেখক:কবি ও প্রাবন্ধিক।
সীমা আছে-তো তাই-না?
মোহাম্মদ আব্দুল হক
# বিশ্বস্রষ্টা, মহাজগতের স্রষ্টা, সকল প্রাণ ও প্রাণীর স্রষ্টা, মহাজাগতিক সকল বস্তুকণার স্রষ্টা মহা মহাজ্ঞানী। তিনি সবকিছু এক মহা পরিকল্পনার দ্বারা গড়েছেন এবং প্রতিটির জন্যে সীমা নির্ধারণ করে রেখেছেন। যতো প্রাণী আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হচ্ছে মানুষ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ও প্রকাশিত জ্ঞান থেকে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এই জ্ঞানী মানুষের জন্যেই সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে এখানে সকল কিছুর উপর কর্তৃত্ব করার জন্যে পাঠিয়েছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই এজন্যে জ্ঞান দান করার পাশাপাশি ভালোটা বা মন্দটা বুঝতে পারার ক্ষমতা দিয়েছেন। মানুষকে জ্ঞান জানিয়ে দেবার পাশাপাশি সীমা লঙ্ঘন না করার জন্যে বিশেষ ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আসলে সীমা নির্ধারণ করে না দিলে সবকিছু এলোমেলো ছুটতে ছুটতে একটির সাথে অন্যটির সংঘর্ষ লেগে কতো রকম অঘটন ঘটে যেতো। আর এমনটি ঘটলেতো আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পারতাম না। আসলেও এখানে আমরা টিকতে পারতাম না। সীমার ভিতর থেকে সবকিছু চলছে এবং মানুষ সীমার মধ্যেই ভালো থাকে। সীমা অতিক্রম করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছে।
# কোনো কিছুই সীমাহীন নয় আমাদের জন্যে। তাই সীমা লঙ্ঘন করার পর্যায়ে ঘটে দুর্ঘটনা। আদিমকাল থেকে শিখে মানুষ পশুদের থেকে আলাদা জীবনাচারে অভ্যস্ত হয়ে সভ্য হয়েছে এবং পশু-পাখি ও সরীসৃপ থেকে হয়েছে আলাদা। মানুষ জ্ঞান অর্জন করেছে এবং প্রাণীকূলের অংশ হয়েও অন্যান্য সকল প্রাণীর চেয়ে হয়েছে শ্রেষ্ঠ। এখন আমরা ধর্মচিন্তা ও রাষ্ট্রচিন্তা করে কোনো কোনো অঞ্চলকে করেছি অধিক উন্নত ।আবার অনগ্রসর অনেক দেশের মানুষ উন্নত দেশকে অনুসরণ করে ছুটে চলেছে। এখানেও সভ্যতা আর অসভ্যতা নিয়ে অনুকরণ করা হয় উন্নত বিশ্বের অনেক কিছু। কিন্তু সবকিছুই কি সভ্যতার মাপকাঠিতে পড়ে? দীর্ঘ কথা নয় ; বরং এখানে কথা শেষ হবে অল্প আলোচনায়।
# এখানে বিশেষভাবে অল্প কথা বলবো আমাদের ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেলামেশা এবং এ বিষয়ে অভিভাবক হিসেবে আমাদের নিস্পৃহতা নিয়ে। সোজা কথা হলো, স্মার্টনেস আর সভ্যতার দোহাই দিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে, সে আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয় হোক, এদের অবাধ মেলা মেশায় উদাসীন থাকা অভিভাবকের অজ্ঞানতার পরিচয় বহন করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে শিশুকাল থেকেই আরো অধিক মনোযোগী হতে হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া থেকে আমরা জ্ঞান ও বিজ্ঞান নিতে পারি; কিন্তু ওদের স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা একে অন্যকে বন্ধুত্বের নামে কিংবা বিশেষ আত্মীয় সর্ম্পকের খাতিরে পিঠ চাপড়ে দেয়া, জড়িয়ে ধরা এবং গালে গাল লাগানো দেখে এসব বিষয়কে সভ্যতার মাপকাঠি ধরা মূর্খতা। এ কখনো সভ্যতা নয়; বরং অসভ্যতার কারখানা। এমন কাজ আমাদের মাঝে সরলতা বা সভ্যতা হিসেবে গ্রহণীয় হতে পারেনা। বুঝতে হবে অবাধ মেলামেশা আদিম কালে মানুষের মাঝে হতো, যা সকল যুগে পশুতে চলে। মাঠে গেলে কার পশু কাকে ধরে তাতে কার কি আসে যায়; কিন্তু এমন আচরণ কি মানুষের শোভা পায়? এমন কাজে অভ্যস্ত হলে অপরিণত ছেলে-মেয়েতে বিশেষ অনুভূতি জন্ম নিতে পারে এবং তা মোটেই ভালো কোনো ইঙ্গিত বহন করবেনা। এভাবে যে কোনো পর্যায়ে সুখানুভূতি পেতে পেতে অনেকের অগোচরে চরম এক অঘটন ঘটে যেতে পারে ছেলে ও মেয়ে মিলে। এমন ঘটনা ঘটে গেলে পরে ছেলে পক্ষ ও মেয়ে পক্ষ হৈচৈ করে একে অন্যকে দোষারূপ করা হয়। কিন্তু যা অঘটন ঘটার তাতো ঘটেই গেল। কাজেই আগে থেকে সজাগ থাকা পারিবারিক ও সামাজিক এবং সু-সাম্প্রদায়িক কর্তব্য মনে করতে হবে।
# এখানে মনে রাখতে হয়, বছর শেষে থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসব কোনো ভালো কিছু দেয় না। বরং এসব উৎসবের উন্মাদনায় কে যে কাকে ‘হাই’ বলে জড়িয়ে ধরে এবং কে যে কি খেয়ে বেতাল হয়ে বেঘোরে কার ঘরে বা কার বিছানায় শুয়ে সীমা লঙ্ঘন করে সীমাহীন নির্লজ্জতায় পশুকেও হার মানায় সে খবর কে রাখে! এগুলো কখনো শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে মানুষের জন্যে সুসভ্য কাজ নয়। ইদানীং আরেক ঢংয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে লেখাপড়া জানা শহুরে মহিলাদের মাঝে। স্বামীর সাথে অল্প কয়েক কথায় মনোমালিন্য হলেই তারা স্বামী বেচারাকে ইংরেজি ‘ডিভোর্স ‘ এর হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। হয়তো দেখা গেল, পরবর্তীতে ডিভোর্স হয়নি বা ডিভোর্স হলেও কেউ কেউ ফিরে আসে।( যদিও ফিরে আসার ঘটনা খুব নগন্য)। যারা ঘর ছেড়ে চলে যায়, তারা সবসময় মা-বাবার কাছে যায় না। তাহলে কোথায় যায়? কার কাছে যায়? এমন প্রশ্ন তাকে বাকি জীবন কুরে কুরে খায়। সে সবার মাঝে থেকেও প্রকৃত অর্থে সে নিন্দিত। এমনকি তার সাথে তার ছেলে মেয়েগুলোও সন্দেহ নিয়ে বাকি জীবন কাটায়। এমন উদাহরণ আছে আমাদের সমাজের আড়ালে। হ্যাঁ, এখানে এসব বলার কারণ, ধৈর্য ধারণ করলে ও সীমা লঙ্ঘন না করলে আমাদেরকে এরূপ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না। সেটা যেনো মনে থাকে। হ্যাঁ, অবশ্যই পুরুষদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে। বলায় ও চলায় সংযমি হতে হবে।
# আমরা মানুষরা যুগে যুগে ধর্মজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান চর্চা করে একটা শৃঙ্খলায় এসেছি এবং সমগ্র প্রাণীকূল এখন মানুষের নিয়ন্ত্রণে। এ আমাদের উন্নত মস্তিষ্কের সাধনার ফসল। পশু শ্রেণির মাঝে এমন জ্ঞান নেই। তাই ওদের শারীরিক ও মানসিক সুখানুভূতি বিশেষ করে অতি স্বাভাবিক যৌন সুখ পেতে ওরা অবাধে মিলেমিশে চলতে চলতে যেকোনো সম্পর্কীয় অন্য পশুর সাথে রঙ্গলীলায় মজে। এক্ষেত্রে ওই দুই পশুর মালিক যদি ভিন্ন হয়; তবু তাতে মালিক পক্ষের মাঝে মনোবেদনা জাগেনা। কিন্তু মানুষের সমাজে উক্ত রূপ মেলামেশার একটা সীমা তৈরী হয়েছে, যা সৌন্দর্যের এবং সভ্যতার। মনে রাখতে হবে পশুতে যা চলে তা পশুর জন্যে স্বাভাবিক এবং ওইরূপ থেকে আমরা মুক্ত থাকবো সচেতনভাবে। এসব পশুর স্বাভাবিক জীবনাচার থেকে বের হয়ে মনীষীদের ধ্যান, জ্ঞান ও কঠোর পরিশ্রমে আমরা উত্তম প্রাণি মানুষ জাতি হয়েছি। কাজেই আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা কখনোই সভ্যতা নয়, সুন্দর নয়। আশাকরি বলতে পেরেছি এবং বুঝেছেন। লেখক:কলামিস্ট ও সাাহিত্যিক।
আমাদের পূর্বপুরুষ
মানিক উল্লাহ
হিমালয়ের পাদদেশে বাংলাদেশের একটি ছোট ভূখন্ডে আমাদের র্পূব পূরুষরা বসবাস করতো। হিমালয়ের নানা র্পবত থেকে আসা নদ নদীতে সাঁতার কেটে,নদীর ¯্রােতে ভেসে ভেসে ,আর নদীর কূল ভেঙ্গে বানের জলে ভাসা মানুষের সাথেই ওদের বেড়ে ওঠা। খাবারহীন, বস্ত্রহীন,গৃহহীনতাই ছিল ওদের জীবনের নিত্য সঙ্গী। রোগ শোকে ঔষধপত্র নিয়ে ছিল অন্যরকম বাড়াবাড়ি । ওই এলাকায় র্হাটঅ্যাটাক,স্ট্রোক,ডাইবেটিস ও কিডনির সমস্যার মত বালাই ছিল না। ওই এলাকায় রোগের নাম ছিল জ্ঞানহারানো,মাথাঘুরানো ,শরীর শোকানো,বহুমূত্র,জিনেধরা,ভূতেধরা,থাবাখাওয়া,উলাবিবি,শিতলা ও কলতালাগা ইত্যাদি। ঐ সভ্যপল্লীতে রোগের নাম যেমন অদ্ভুত ঔষধের নাম আরও বেশি অদ্ভুত । সামান্য রোগের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের আশ্রয় স্থাাল ছিল কবিরাজ ও উজা। অবশ্য তাদের আশ্রয়ে মানুষের উপকারের চেয়ে অপকারই হয়েছে বেশি। গাঁয়ের দাদা দাদিমারা ছিল অন্যরকম চিকিৎসক। নানা গাছের ফলমূল দিয়ে যে চিকিৎসা চলতো তা আধুনিক চিকিৎসার চেয়ে কম ছিল না। তবে তাঁরা যদি র্ব্যাথহতো রেফার করতো এলাকার একমাত্র স্বজন ননমেট্রিক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে।এরাই ছিল এলাকার বিশেষজ্ঞ,গরিবের বন্ধু । অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে এরাই ছিল রোগীর হত্যাকারী । রোগ র্নিণয়ে র্ব্যাথ হয়ে ট্রাইফয়েডের রোগীকে ম্যালেরিয়ার ঔষধদিতো। স্ট্রোক করলে কবিরাজের নিকট রেফার করতো।কখনো কখনো অভিভাবকের খবরদারিতে ডাক্তার নিজেও ভয় পেতো।“ ডাক্তার সাব কলতা যদি অয় ,তয় ইন্ডুশন দেইননা যেন,কবিরাজ কইছে ইন্ডুশন দিলে ঝারায় কাম করতো না।” তাদের এই অন্ধ বিশ^াস আর নিষ্পাপ মানুষগুলোর আকুতিতে কেউ কেউ আবার সুস্থা হয়ে উঠতো।খোদা তালার অশেষ রহমতে।
পাহাড় থেকে ভয়ে আসা বালুর চর পড়া আধমরা হাটুজল শান্ত নদীটি র্বষা এলেই হয়ে উঠে ভয়ংকর খর¯্রােতা । পাল্টে যেতো তার চেহারা। নবযৌবন পাওয়া তরুনের মতো হয়ে উঠতো ভয়ংকর দুঃসাহসী । সামান্য বৃষ্টি হলেই দু তীর ভাসিয়ে অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে ধেয়ে চলতো নিন্মদেশে। সাথে নিয়ে যেতো দুই তীরে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষের ঘর বাড়ি।অথৈ নদীর জলে ভাসতো গরু, ছাগল, হাঁস,মুরগীসহ গৃহপালিত পশুপাখি। বন্যার জল নেমে গেলেই চোখে পড়তো নতুন দৃশ্য। ক্ষনিকের বন্যায় তাদেরকে করেফেলতো নিঃস্ব । তিলে তিলে গড়ে তুলা জমিগুলো পরিণত হতো মরু ভূমিতে। বানের জলে ভাসতে ভাসতে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো পড়েযেতো নতুন সমস্যায় । ফসলের মাঠগুলো রূপ নিতো শস্যহীন বিরান ভূমিতে । মানুষগুলো পড়তো অস্থিাত্বের সংকটে।
ওরা বাচার জন্য সংগ্রাম করতো। ওরা বেঁেচ যেতো । বাঁচতো বনলতার মতো । বাঁচার জন্য ওরা ঘর ছেড়ে ,গ্রাম ছেড়ে,নিজ এলাকা ছেড়ে চলে যেতো শহরে। সেখানে আপনার মতো করে গড়ে তোলতো আপন বলয়। ওরা আশ্রয় নিতো খুলা আকাশের নিচে। রেল জংশনে,ময়লার বাগারের পাশে কিংবা ফুটপাতে । জীবনের প্রয়োজনে মানুষ নিজেকে নিক্ষেপ করে যত্রতত্র। তারাও করেছিল ধনি গরিব সকলে এক তাবুতে থেকে বাঁচার সংগ্রাম করতো। তাদের র্কমক্ষেত্রও ছিল বিচিত্র। রিক্সা চালক,ভেনচালক, হোটেল ভয় ও দারোয়ান হতো পুরুষরা । বেশিরভাগ মেয়েরা বাসায় বাসায় কাজ করতো, তবে আয়া ভূয়ার কাজও করতো।
যারা মাটি কামড়াইয়া নিজের বাপদাদার বাড়িতে থেকে গিয়ে ছিল তাদের অবস্থাা ও ভালো ছিলো না। জমিতে ফসল ছিল না, ঘরে খাবার ছিল না মূলত স্বাভাবিক জীবন ধারণের মতো কিছুই ছিল না। সার্মথ্যবান পুরুষরা নদীতে জাল ফেলে নানা মাছ ধরতো। বাকি নারী পুরুষ বালি খুড়ে লাউ ,আলু, তরমুজ ও আঁখ চাষ করতো । এই সব চাষ করতে গিয়ে, করতে হতো অমানবিক পরিশ্রম । নদী থেকে মাটির কলসি ভরে ভরে কাঁদে কাখে করে দিন রাত পানি এনে গাছে গাছে দিতো । এতো পরিশ্রম করেও অনেক সময় কাক্সিক্ষত ফসল পেতো না কৃষকরা । যা পেতো তাও বাজার জাত করতে হতো আরো অমানুবিক পরিশ্রম। এলাকায় রাসÍাঘাট না থাকায় কোন প্রকার যানবাহন চলতোনা । তাই মানুষ তার প্রয়োজনিয় দ্রব্যসামগ্রী বহন করতো মাথায় করে । এই জন্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তো অপেক্ষাকৃত শারীরিক ভাবে র্দুবল নরনারী । তারা বোঝা বহন করতে পারতো না বলে অন্যদের চেয়ে কমমূল্যে বাড়িতেই দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করতো। আর যাদের নিজের জমিজমানেই তারা অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রয় করতো। তারা র্সূয উদয়ের পর থেকে র্সূযাস্তের র্পূব র্পযন্ত কাজ করতো। বিনিময়ে তারা দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ টাকা পেতো। যারা শিশু ছিলো তারা কাজ করতো (কাজের বিনিময় খাদ্য) পেটে ভাতে। ওরা আমাদের স্বজন ছিল । পেটে ভাত ছিলোনা,পরনে জামা ছিল না । তবু ওরা সৎ ছিল । পরোপকারি ছিল । কঠোর পরিশ্রমি ছিল। তাদেঁর চোখে স্নিগ্ধতা ছিল। হৃদয়ে ছিল ভালোবাসা। ভালোবাসতো মাতৃভূমি ও মাকে । মা ও মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য জীবন বাজিরেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে বারবার ।
আমাদের র্পূব পুরুষরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতো । তাদেঁর বিজ্ঞারে জ্ঞান ছিল সীমিত । তাঁরা অসৎ উপায়ে উর্পাজন করতো না। অন্যের র্অথসম্পদ আত্মসাৎ করতো না। তাঁরা গুরুজনকে মান্য করতো। তাঁদের শ্রম,ঘাম,সারল্য আর আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমারা পেয়েছি সুন্দর একটি ভুখন্ড । যার নাম বাংলাদেশ। তাদেঁর যা র্অজন ছিল,সব উজার করে দিয়ে গেছেন কিন্তু আমরা রক্ষা করেছি সামান্যই । আমরা যখন ভালো কাজ করি তাঁদের আত্মা শান্তি পায় আমরা পাই সান্ত¡না। এমন করেই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকে আমাদের পূর্বপুরুষ ।
লেখক:সাহিত্য সম্পাদক (সুনামগঞ্জের ডাক) ও প্রভাষক (বাংলা বিভাগ) সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রি কলেজ,সুনামগঞ্জ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com