সিলেট ২০শে জুন, ২০২২ ইং | ৬ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২১
ইফতি রহমান:
করোনাকালীন সময়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের ব্যপক সমাগম ঘটেছে। করোনার প্রার্দুভাবের কারণে সারাদেশের মতো সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পর্যটন এলাকাগুলোতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। তবে ঈদের ছুটিতে সরকারি এসব বিধিনিষেধ অমান্য করে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার পর্যটন এলাকাগুলো। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা পর্যটকেরা মানছেন না স্বাস্থ্যাবিধিও। আর এক্ষেত্রে নেই প্রশাসনের নজরদারি। গত শনিবার সরেজমিনে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক, বরগোপ টিলা (বারেকের টিলা), জাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি স্থাানেই শতাধিক পর্যটকের ভিড়। এই এলাকাগুলোর মধ্যে শহীদ সিরাজ লেকে পর্যটকদের ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব পর্যটকরা স্বাস্থ্যাবিধির তোয়াক্কা করছেন না। তাদের মুখে মাস্ক নেই, নেই শারীরিক দূরত্বের বালাই। অনেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তে গিয়ে ভিডিও করেছেন এবং সেলফি তুলেছেন। করোনার এমন উর্ধ্বগতির মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন ঘুরতে এসেছেন এমন প্রশ্ন ছিল সবার কাছে। পর্যটকরা বলেছেন, তারা জানেন দেশে করোনা পরিস্থিাতি খারাপের দিকে। তবে ঈদের ছুটিতে না ঘুরলে ভালো লাগে না তাদের। তাই তারা দলবল নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে, আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন। শহীদ সিরাজ লেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শরীফ হোসেন বলেন, আমার বাড়ি বরিশালে। তবে আমি আমি সুনামগঞ্জ শহরে থাকি। আমার নিজের মোটরসাইকেলে করে জেলা শহর থেকে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে নিলাদ্রীতে ঘুরতে এসেছি। পরিবারের সদস্যরা অনেকদিন ধরে বলছিল কোথাও ঘুরে আসার জন্য। তাই ঈদের সুযোগটা কাজে লাগালাম। তবে বৃষ্টি এসে কিছুটা নষ্ট করে দিয়েছে আনন্দ। বৃষ্টি না হলে ভালো লাগত বেশি। আরেক পর্যটক রনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে এখানে বেড়াতে এসেছি। এখানে করোনার কোনো রোগী নেই। ভারতে করোনা রোগী যেরকম দেখা যাচ্ছে আমাদের সুনামগঞ্জে সেরকম দেখা যাচ্ছে না। সুনামগঞ্জে কেউ মানেও না এসব স্বাস্থ্যাবিধি। তাই সবাই মিলে এই জায়গায় ঘুরতে এসেছি। সিলেট থেকে শহীদ সিরাজ লেকে ঘুরতে এসেছিলেন মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, সবার মুখে শুনেছি এ জায়গাটি অনেক সুন্দর। তাই অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিল এখানে আসার। আল্লাহ সে ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আসার পর অনেক ভালো লাগছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোভ সামলাতে পারিনি, আবেগ থেকে চলে এসেছি। তবে আমরা স্বাস্থ্যাবিধি মেনেই ঘুরছি। অসুবিধা হচ্ছে না। জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাকা আক্তার ঘুরতে এসেছিল মা- বাবার সঙ্গে। তাদের কারও মুখে ছিল না মাস্ক। বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের সীমান্তে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন তারা। জাকা বলে, এখানে আসা নিষেধ আমি জানি। ঘুরতে ইচ্ছে করছিল তাই আসছি। আপনার মুখে মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করলে সে বলে, আমার মাস্ক আছে। এখন ব্যাগে রেখেছি। সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জুনিয়র প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন মো. আবু ইউসূফ ও মেহেদী হাসান লিটন। তারা বলেন, আমরা এবার ঈদে ছুটি পাইনি। বাড়ির মানুষের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পারিনি। সেই খারাপ লাগা ভুলতে এখানে ঘুরতে এসেছি। লেকে এসে অনেক ভালো লাগছে। এ সময় তাদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। এ বিষয়ে এই দুই প্রকৌশলী বলেন, এতোক্ষণ মাস্ক পড়েই ছিলাম। এখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য এখন মাস্ক খুলে রেখেছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মাস্ক খুলে উপভোগ করছি। বিশ্বম্ভরপুর থেকে আসা পর্যটক মো. সোহেল রানা বলেন, আমি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। অনেক পর্যটক এসেছে এখানে। তাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এতে অনেক আনন্দ লাগছে। আপনার মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার কেউ মাস্ক ব্যবহার করে না। তাই আমরাও ব্যবহার করিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পর্যটন এলাকাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে কেউ যেন এসব এলাকায় ঘুরতে না আসে সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com