সিলেট ২০শে মে, ২০২২ ইং | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২১
সু.ডাক.ডেস্ক:
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেড় শতাধিক ছাড়িয়েছে। শনাক্তও প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বেশ কয়েকটি জেলায় আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও সংকট বাড়ছে। রাজধানীর বাইরে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রোগী নিয়ে রাজধানীতে ছুটে আসছেন। তাদের অধিকাংশই প্রথমে সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ’র জন্য ছুটছেন। দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় আইসিইউ নেই। ৩৪ থেকে ৩৫ জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম আছে। রাজধানীর ৪টি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এ ছাড়া তিনটিতে আইসিইউ শয্যার কোনো ব্যবস্থাই করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশে অক্সিজেন সংকট প্রসঙ্গে জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিনা অক্সিজেনে দেশে বহু লোক মারা যাচ্ছেন। আরও মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে অক্সিজেনের সংকট নেই। তাহলে তাদের কাছে অক্সিজেনের সংকটের সংজ্ঞা কি? এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, বহু আগেই বলেছিলাম অক্সিজেন বৃদ্ধি করতে। কিন্তু মন্ত্রী বলেছেন অক্সিজেন নিয়ে চিন্তা করবেন না। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, দেড় বছর পরে এসেও অক্সিজেনের এই অবস্থা কেন? আইসিইউ’র জন্য হাহাকার দেখছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও সব জেলায় আইসিইউ’র ব্যবস্থার উন্নতি হলো না কেন? নিয়মিত নির্দেশনা পালন করা প্রয়োজনবোধ করছে না সংশ্লিষ্টরা। এর থেকে বুঝা যায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, সংক্রমণ বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো- দেশের অধিকাংশ মানুষই নিয়ম মেনে মাস্ক পরেনি। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিল, কিন্তু কতোটুকু মানা হয়েছে বা হচ্ছে তা সবাই জানে। এই মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, এই দুটি উপায় ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, গত একমাস যাবৎ বলা হচ্ছিল যে, সংক্রমণটা আবার বাড়বে, কিন্তু কোনো মানুষই কোনো ধরনের বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা মানেনি। এক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, সাধারণ জনগণকেও আন্তরিক হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বিশ্বাসই করে না যে, করোনাভাইরাস বলে কিছু আছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষ হয়তো বিশ্বাস করে, তাও তাদের সবাই মাস্ক পরে না। তাহলে এই দেশে কি কারণে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশে ৩৪ থেকে ৩৫টি জেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই। তবে রোগী দ্বিগুণ হলে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই মুহূর্তে অক্সিজেনের চাহিদা ১৯০ থেকে ২০০ টন। সক্ষমতা আছে ২৫০ টনের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৬টিতেই কোভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ নেই। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫টি, চট্টগ্রামের ৭টি, রংপুরের ৬টি, সিলেটের ২টি, বরিশালের ৪টি, খুলনার ৪টি, রাজশাহীর ৬টি ও ময়মনসিংহের ২টি জেলা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে বিভিন্ন জেলায় ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা’ সংবলিত আইসিইউ সমতুল্য শয্যা আছে ১ হাজার ৫৫৪টি। ১১টি জেলায় সেরকম শয্যাও নেই। আইসিইউ খালি নেই যেসব হাসপাতালে: ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আইসিইউ’র ব্যবস্থা না থাকা তিনটি হাসপাতাল হলো: মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। আইসিইউ খালি আছে যেসব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে: ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬টির মধ্যে খালি ৬টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৬টির মধ্যে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টির মধ্যে ৪টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৩টি, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ৫টির মধ্যে ৩টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৬টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ২০টির মধ্যে মাত্র ২টি আইসিইউ খালি রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালে ২১২টির মধ্যে ৮৩টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে। সবমিলিয়ে সরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি হাসপাতালে সর্বমোট ১১০টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে: গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। তিনি বলেন, গত সাত দিনের করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি প্রায় কাছাকাছি। সংক্রমণ পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। ২রা জুলাই রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। ডা. নাজমুল আরও বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার যখন যেখানে ব্যবহার হয় সেটা আবার রিফিল করার জন্য চলে যায়। সংখ্যাতে সেটা রিজার্ভ হিসেবে জমা থাকে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেটি দ্রুত সরবরাহ করা হয়। যে কারণে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা মাঝে মাঝে বেড়ে যায়-কমে যায়। তবে বাস্তাবেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা বেড়েছে, তার কারণ চাহিদাও বেড়েছে। অক্সিজেনের অভাবে কিছু রোগীর মৃত্যু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে এ বিষয়ে বলা যাবে। তবে অক্সিজেনের সামগ্রিক সরবরাহের কোনো সংকট নেই। উৎপাদনেরও এই মুহূর্তে কোনো সংকট নেই। উৎপাদনকারকদের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন বৈঠক করছি এবং আমাদের চাহিদা জানিয়ে দিচ্ছি। এই মুহূর্তে কোনো সংকট নেই, তবে রোগী সংখ্যা বেড়ে গেলে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। টিকা নিতে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা আমরা আইসিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি যেন তারা নিবন্ধন করতে পারেন। পর্যায়ক্রমে সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ক্ষেত্রে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ শেরগুল আহমেদ
সম্পাদকীয় ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ দিশারি ২৯ আ/এ (২য় তলা) কালীবাড়ি রোড, সুনামগঞ্জ।
ফোনঃ ০৮৭১-৬২১২৩ মোবাইলঃ 01754887923
ইমেইলঃ sunamganjerdak@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.sunamganjerdak.com